ৠকবেদের সময়কাল থেকে গায়ত্রী মন্ত্র বেদের সর্বশ্রেষ্ঠ মন্ত্র হিসাবে বিবেচিত
হয়েছে। এই মন্ত্রের দ্রষ্টা ৠষি বিশ্বামিত্র এবং দেবতা সবিতা। ৠষি বিশ্বামিত্রই
প্রথম এই মন্ত্রের মর্ম্ম উপলব্ধি করে প্রচার করেছিলেন। এই মহামূল্যবান মন্ত্রেই
বেদাশিক্ষালাভের প্রারম্ভে ব্রহ্মচারীর দিক্ষা সম্পন্ন হয়। পাঠ করুন এই বিশেষ
মন্ত্র ও জানুন এই মন্ত্রের ম্যাজিকাল উপকার।



alt="গায়ত্রী মন্ত্র ও তার ম্যাজিকাল উপকার জানুন।"
height="226"
src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEindrqy73pEBlFrUvvDfZM6sdK1AJhK02m9T8idN6HNES4TTQq7QYc0HK9L-MnZVCw41FRaWTjgeWfjCzIIyX2ksP5wzkws2Tkhfx8rDPt71cYQwqHc-nOHP2pIfWJRGFZa1NKYTbt_rFhZBaXRrVcqdkdHsNazrOA5hN52cxh-knXdcJqiexfBaS4s06aT/s0-rw/gayatri-mantra.jpg"
title="গায়ত্রী মন্ত্র ও তার ম্যাজিকাল উপকার জানুন।"
width="400"
/>

গায়ত্রী মন্ত্র



ওম ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎসবিতুর্ভরেণ্যম ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।



গায়ত্রী মন্ত্রের বাংলা অর্থ




সেই প্রাণস্বরূপ, দুঃখনাশক, সুখস্বরূপ, শ্রেষ্ঠ, তেজস্বী, পাপনাশক, দেবস্বরূপ
পরমাত্মাকে আমরা নিজের অন্তঃকরণে ধারণ করব। সেই পরমাত্মা আমাদের বুদ্ধিকে
সন্মার্গের দিকে প্রেরিত করুন।




গায়ত্রী মন্ত্রের মূলত দশটি শব্দ রয়েছে। তবে সেই দশটি শব্দ উচ্চারণের
পূর্বে ওম ভূঃ, ভুবঃ স্বঃ উচ্চারিত হয়। শব্দগুলির অর্থ নীচে দেওয়া হলো :-





  • "ভূঃ" অর্থ প্রাণস্বরুপ।(যিনি সর্ব প্রাণীকে প্রাণ দান করেন, যিনি প্রাণ
    স্বরুপ, তিনিই ভূঃ।)

  • "ভুবঃ" অর্থ দুঃখনাশক।(যিনি দুঃখ বিনাশ করেন)


  • "স্বঃ" অর্থ সুখ স্বরুপ। (যিনি সর্বত্র ব্যাপক বা যিনি আনন্দস্বরুপ তিনিই
    স্বঃ।)

  • "তৎ" অর্থ সেই।

  • "সবিতুঃ" অর্থ সমগ্র জগতের উৎপাদক।

  • "বরেণ্যম্" অর্থ বরণ যোগ্য সর্বোত্তম।

  • "ভর্গোঃ" অর্থ পাপ নাশক তেজকে।


  • "দেবস্য" অর্থ সমগ্র ঐশ্বর্য দাতা। (পরমত্মা দাতা, জ্ঞানের উদ্দীপক এই অর্থে
    তিনি দেব।)

  • "ধীমহি" অর্থ ধারণ করি বা ধ্যান করি।

  • "ধিয়ঃ" অর্থ প্রজ্ঞা সমূহকে বা নির্ম্মল বুদ্ধির।

  • "যঃ" অর্থ যিনি

  • "নঃ" অর্থ আমাদের

  • "প্রচোদয়াৎ" অর্থ প্রেরণা দান করেন।





ৠকবেদের মন্ডল ৩।৬২।১০ একটি সুক্ত গায়ত্রী মন্ত্র। এই মন্ত্র উচ্চারণের পূর্বে ওম
শব্দটি উচ্চারিত হয়।




গায়ত্রী মন্ত্রের প্রথম তিনটি শব্দ ভূঃ, ভুবঃ ও স্বঃ। এই তিনটি শব্দ দ্বারা তিন
জগতকে চিহ্নত করা হয়। ভূঃ বলতে মর্ত্যলোক বোঝায়, ভূবঃ বলতে বোঝায় স্বর্গলোক এবং
স্বঃ হল স্বর্গ ও মর্ত্যের সংযোগরক্ষাকারী এক লোক। বেদে সপ্তভূমি বা সাত জগতের
উল্লেখ আছে। আসলে ভূঃ, ভুবঃ ও স্বঃ - এই তিন লোক চেতন, অর্ধচেতন ও অচেতন - এই তিন
স্তরের প্রতীক।



গায়ত্রী মন্ত্রের ফল




গায়ত্রী মন্ত্র জপ করলে বুদ্ধি তীক্ষ্ণ হয়, চাকরিতে উন্নতি ও বানিজ্যে লাভ অর্জন
করা যায়। সারাদিন এই মন্ত্র জপ করতে না-পারলে ১০৮ বার এই মন্ত্র জপ করে নিন। তবে
গায়ত্রী মন্ত্র জপ করার সময় কিছু নিয়ম পালন করা উচিত।একটি বিশেষ ছন্দে এই
মন্ত্র পরিবেশিত হয়। ছন্দটিও গায়ত্রী ছন্দ। প্রাত্যহিক উপাসনায় এই মন্ত্র পাঠ করা
অতি উত্তম কর্ম হিসাবে ধরা হয়।




দেবী গায়ত্রীর তিন রূপ। সকালে তিনি ব্রাহ্মী, মধ্যাহ্নে বৈষ্ণবী, সন্ধ্যায়
শিবানী। ব্রাক্ষ্মী রূপে তিনি রক্তবর্ণা ও অক্ষমালা-কমণ্ডলুধারিনী। বৈষ্ণবী রূপে
শঙ্খ, চক্র, গদা ধারণকারিনী এবং শিবানী রুপে তিনি বৃষারূঢ়া, শূল, পাশ ও নরকপাল
ধারিনী এবং গলিত যৌবনা। পূরাণ কথা অনুসারে, যজ্ঞকালে একবার ব্রহ্মার স্ত্রী
সাবিত্রী একা যজ্ঞস্থলে আসতে অস্বীকার করলে, ব্রহ্মা ক্রুদ্ধ হয়ে অন্য নারীকে
বিবাহ করে যজ্ঞ সমাপ্ত করার পরিকল্পনা করেন। তার ইচ্ছানুসারে দেবরাজ ইন্দ্র
পাত্রী খুঁজতে বের হয়ে এক আভীরকন্যাকে (গোয়ালিনী) পাত্রী মনোনীত করেন। বিষ্ণুর
অনুরোধে তাকে গন্ধর্ব মতে বিবাহ করেন ব্রহ্মা। এই কন্যাই গায়ত্রী।




গায়ত্রীর ধ্যানে আছে, তিনি সূর্যমণ্ডলের মধ্যস্থানে অবস্থানকারিনী, বিষ্ণু বা
শিবরূপা, হংসস্থিতা বা গরুড়াসনা বা বৃষবাহনা। তিনি একাধারে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও
শিব। হিন্দু বিধান অনুসারে, সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় গায়ত্রী ধ্যান করতে হয় এবং
এই মন্ত্র ধ্যান বা পাঠে মুক্তি প্রাপ্ত হয় বলে এর নাম ‘গায়ত্রী। এই মন্ত্রে
দীক্ষিত হলে তার পূণর্জন্ম হয় ও তিনি দ্বিজ নামে আখ্যাত হন। সেই কারণে দ্বিজ
অর্থাৎ ব্রাহ্মণগণের উপাস্য। বৈদিক গায়ত্রী মন্ত্রে আদলেই গণেশ, কালী,
গুহ্যকালী, নারায়ণ, রাধা প্রভৃতি দেবতার গায়ত্রী রচিত হয়েছে।