জ্ঞানের দেবী বিদ্যার দেবী হলেন মাতা সরস্বতী। ঋকবেদের সময় থেকে শুরু করে
বর্তমান সময় পর্যন্ত মাতা সরস্বতী একজন উল্লেখযোগ্য দেবী হিসেবে পূজিত
হয়ে আসছেন।
বিভিন্ন পুরানে এবং ধর্মীয় শাস্ত্রে মাতা সরস্বতীর বিভিন্ন মন্ত্র ও নানাউপাচারে
তাঁর আরাধনার উল্লেখ পাওয়া যায়। বিদ্যা বুদ্ধির বিকাশ ও জ্ঞান অর্জনের জন্য
সঠিক পদ্ধতি মেনে সরস্বতী প্রণাম মন্ত্র উচ্চারণ ম্যাজিকের মতন কাজ করে। আসুন
জেনে নেই কি ভাবে পাঠ করলে পাওয়া যাবে সবস্বতীর প্রণামমন্ত্র
পাঠের উপকার।
পাঠ পদ্ধতি জানবার আগে আমাদের জানতে হবে সরস্বতী মায়ের প্রনাম মন্ত্রটি।
আমাদের বঙ্গদেশে যুগযুগ ধরে মাঘমাসের পঞ্চমী তিথিতে মাতা সরস্বতীর আরাধনা করার
রিতী প্রচলিত। উক্তদিনে তিথির নির্দিষ্ট সময়ে শুদ্ধাসনে উপবেসন করে মনপ্রান উজার
করে নীচের মন্ত্র পাঠ করলে বিদ্যাবুদ্ধির বিকাশ অবশ্যাম্ভাবী।
alt="সরস্বতী পূজার মন্ত্র pdf | সরস্বতী পূজার মন্ত্র পুষ্পাঞ্জলী"
height="803"
src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiX6YJnKmsuq--FNJv3qDEFkx69Ov8-j68AHMPD8ubMOsd_5lmpPMm8ogQqABcVzWeYbD91cSZ9m5GkzEvKvTrQAE8Vdz0TUmXQ8iX8Bwl3CBoY869UKoZB4fGuDKel2RLwOfOYyVCz-9uSLfxRIRQoiAC_2dJu2PxKpsMCuilymCTCoDEBJOCBSX9v_PIs/s0-rw/saraswati.png"
title="সরস্বতী পূজার মন্ত্র pdf | সরস্বতী পূজার মন্ত্র পুষ্পাঞ্জলী"
width="400"
/>
সরস্বতীর প্রতিষ্ঠা মন্ত্র
ওম ভূর্ভুবঃ স্বঃ সরস্বতী দেব্যৈ ইহাগচ্ছ ইহ তিষ্ঠ। এতানি
পাদ্যাদ্যাচমনীয়-স্নানীয়ং, পুনরাচমনীয়ম্।।
প্রণাম মন্ত্র
- সরস্বতি মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
- বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোঽস্তু তে।
- জয় জয় দেবি চরাচরসারে,
- কুচযুগশোভিতমুক্তাহারে।
- বীণা-পুস্তক রঞ্জিত হস্তে,
- ভগবতি ভারতি দেবি নমোঽস্তু তে।।
তবে প্রণাম মন্ত্র পাঠের আগে পুস্পাঞ্জলী মন্ত্র পাঠ করার প্রথা আছে।
হিন্দুধর্মাবলম্বীগন সাধারণত উপবাস থেকে শুদ্ধবস্ত্রে ও শুদ্ধাসনে উপবেশন করে
শ্বেত পুস্প সহযোগে মাতা সরস্বতীর পূজাতে নিম্ন মন্ত্রে পূস্পাঞ্জলী দেন।
- নম জয় জয় দেবি চরাচরসারে,
- কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে
- বীণাপুস্তক রঞ্জিত হস্তে,
- ভগবতি ভারতি দেবি নমোঽস্তু তে॥
- ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
- বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ॥
- এষ সচন্দন পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ॥
সংস্কৃত শব্দ সরস ও বতী শব্দ বন্ধে সরস্বতী শব্দের উৎপত্তি। সরস অর্থে বাক্য ও
বতী অর্থাৎ যিনি অধিষ্ঠান করেন। অর্থাৎ বাক্যে যিনি অধিষ্ঠান করেন তিনিই দেবী
সরস্বতী। আবার অন্য মতানুসারে সরস অর্থে হ্রদ। এই মতানুসারে তিনি হ্রদ সরোবরের
অধিষ্ঠাত্রী দেবী।
ৠকবেদের দশম মন্ডলে দেবী সরস্বতীকে মাতাশ্রেষ্ঠ দেবী শ্রেষ্ঠ এবং নদী শ্রেষ্ঠ
হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
অম্বিতমে নদীতমে দেবিতমে সরস্বতি
যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় মাতা সরস্বতী হলেন মাতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, নদীগণের
মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং দেবীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
ৠক্ বেদের দশম মন্ডলে দেবী সরস্বতীকে জ্ঞানের অধিষ্টাত্রী দেবী হিসাবে বর্ণনা করা
হয়েছে।
বিভিন্ন হিন্দু পুরাণেও সরস্বতীকে বিদ্যার দেবী ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী
হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
বৈদিক যুগে হিন্দু পুরানে এবং বৌদ্ধধর্মেও মাতা সরস্বতী নানা নামে পূজিত হয়েছেন।
মাতা সরস্বতীর নানা নাম :
বাগদেবী, সারদা, বাগদীনী, বাগীশা, বাগদেবতা, বাগীশ্বরী, বাঙ্ময়ী, বিদ্যাদেবী,
বাণী, বীণাপাণি, ভারতী, মহাশ্বেতা, শতরূপা, গীর্দেবী, সনাতনী, পদ্মাসনা,
হংসারূঢ়া, হংসবাহনা, হংসবাহিনী, কাদম্বরী, শ্বেতভুজা, শুক্লা ও সর্বশুক্লা
ইত্যাদি।
বিদ্যাঅর্জনকারীগন এবং জ্ঞানলাভে ইচ্ছুক ব্যক্তিগন প্রত্যহ সকালে সরস্বতীর ধ্যান
মন্ত্রে তাঁর আরাধনা করতে পারেন। এই মন্ত্র মনকে শুদ্ধ করে এবং একাগ্রচিত্ত হতে
সহযোগিতা করে মানসিক বিকাশ ঘটে।
সরস্বতী বন্দনা মন্ত্র
- যা কুন্দেন্দু তুষারহার ধবলা যা শুভ্রবস্ত্রাবৃতা।
- যা বীণাবরদণ্ডমণ্ডিতকরা যা শ্বেতপদ্মাসনা।।
- যা ব্রহ্মচ্যুতশংকরপ্রভৃতিভির্দেবৈঃ সদা বন্দিতা।
- সা মাং পাতু সরস্বতী ভগবতী নিঃশেষজাড্যাপহা।।
- শুক্লাং ব্রহ্মবিচারসারপরমাংধ্যাং জগদ্ব্যপনীং।
- বাণী-পুস্তক-ধারিণীমভয়দাং জাড্যাংধকারপহাম্।।
- হস্তে স্ফাটিক মালিকাং বিদধতীং পদ্মাসনে সংস্থিতাম্।
- বন্দে তাং পরমেশ্বরী ভগবতীং বুদ্ধিপ্রদাং শারদাম্।।
সরস্বতীর ধ্যানমন্ত্র
- তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ
- কুচভরনমিতাঙ্গী সন্নিষন্না সিতাব্জে ।
- নিজকরকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ
- সকলবিভবসিন্ধ্যৈ পাতু বাগদেবতা নম: ।।
এর অর্থ- চন্দ্রের তরুণ অংশের ন্যায় যাঁর কান্তি শুভ্র, যিনি কুচভরে অবনতাঙ্গী,
যিনি শ্বেত পদ্মাস্থনা , যাঁর নিজ কর কমলে উদ্যত লেখনী ও পুস্তক শোভিত , সকল
ঐশ্বর্য সিদ্ধির নিমিত্ত সেই বাগদেবী আমাদিগকে রক্ষা করুন ।
সরস্বতীর জপ মন্ত্রঃ
- ওঁ বদ্ বদ্ বাগ্বাদিনি স্বাহা।
প্রতিদিন ব্রাহ্মমুহুর্তে অর্থাৎ রাত শেষ ও প্রভাত শুরুর মুহুর্তে পবিত্র মনে
সরস্বতীর ধ্যান মন্ত্র জপ মন্ত্র যথাশক্তি পাঠ করলে দেবী তুষ্ট হন। এবং বন্দনা
মন্ত্র পাঠ শেষে পুস্পাঞ্জলী ও প্রণাম মন্ত্রপাঠ করে দেবীকে প্রণাম জানিয়ে দিন
শুরু করলে বিদ্যায় বাধা দূর হয়। দেবীর অআরাধনা যিনি করেন তিনি বিদ্যা ক্ষেত্রে
উন্নতি লাভ করেন এবং তার জ্ঞানের বিকাশ ঘটে। তাই সমস্ত বিদ্যার্থীদের প্রতিদিন
মন্ত্রসহযোগে মাতা সরস্বতীকে প্রনাম নিবেদন করতে হয়। ৠতু ভেদে ব্রাহ্মমুহূর্তে
অসমর্থ হলে স্নান সেরে পূর্ণভক্তি সহযোগে শুদ্ধচিত্তে শুদ্ধ বসনে শুদ্ধ আসনে
উপবেশনে মাতা সরস্বতীর আরাধনার সুফল বিদ্যার্থীরা নিশ্চই মায়ের কৃপায় উপলব্ধি
করতে সমর্থ হবেন।
0 মন্তব্যসমূহ